• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

×

অল্পের জন্য হলো না

  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪
  • ২৬ পড়েছেন
ড. সাঈদুর রহমানের কলামঃ
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জেতা উচিত ছিল বাংলাদেশের । বোলাররা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছিলেন। ১১৫ রানে বেঁধে ফেলেছিলেন আফগানিস্তান দলের ব্যাটসম্যানদের। মাত্র ১১৬ রানের টার্গেট, পরবর্তীতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ১৯ ওভারে ১১৪ রানের টার্গেট। অথচ এই সহজ টার্গেটে পৌঁছুতে পারলো না বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ এখনো বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টির মতো করে খেলতে পারে না। ১২.১  ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারলে অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশে চলে যেতো সেমিফাইনালে। এইরকম সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে অনেক দলই হয়তো সেমিফাইনালের টিকেট আদায় করে নিতো। আমরা পারিনি, তার একটাই কারণ আমাদের আসলে জেনুইন টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানের অভাব। বাংলাদেশের বোলাররা আজকেও ভালো বল করলেন। বিশেষ করে রিশাদ হোসেনের কথা বলতেই হয়। বিশ্বকাপের মতো আসরে ১৪ উইকেট নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। যদি বাংলাদেশ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল খেলতে পারতো, তাহলে হয়তো তিনি সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হওয়ার দৌড়ে ভালোভাবেই থাকতে পারতেন। দারুণ এক আবিষ্কার তিনি বাংলাদেশের জন্য। তাকে যদি খুব ভালোভাবে পরিচর্যা করা যায়, এমনকি রিশাদ হোসেন সহ আরো বেশ কিছু তরুণ লেগ ব্রেক বোলারকে চিহ্নিত করে, তাদের জন্য যদি আলাদা লেগ ব্রেক কোচ নিয়োগ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো ফলাফল আসতে পারে। তানজিম হাসান সাকিব অসাধারণ একটা টুর্নামেন্ট কাটালেন। শরিফুল ইসলামের মত বোলারকে একাদশের বাইরে রাখতে বাধ্য করেছেন তিনি তার অসাধারণ নৈপুণ্য দিয়ে। শরিফুল ইসলামের ইনজুরি সুযোগে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্যন্ত শীর্ষ বোলারদের  তালিকায় ১১ উইকেট নিয়ে দশম স্থান অধিকার করেছেন। অনেক বড় অর্জন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তানজিম হাসান সাকিব এবং রিশাদ হোসেন আগামী বেশ কিছু বছর হয়তো বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবেন। হারিয়ে যাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান অনেকটাই ফিরে এসেছেন। বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য মুস্তাফিজকে আইপিএল থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।
আইপিএলের আরো কিছু ম্যাচ খেলতে পারলে হয়তো মুস্তাফিজ আরো উপকৃত হতেন। আইপিএল বা বিগ ব্যাশের মতো ফ্রাঞ্চাইজি লিগে বাংলাদেশের আরও বেশি ক্রিকেটার যেন খেলতে পারে, সেদিকে মনোযোগী হওয়া দরকার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের। ব্যাটিং দৈন্যতা কিন্তু কিছুতেই কাটাতে পারছে না বাংলাদেশ দল। সৌম্য সরকার দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় দলে অনিয়মিত। অথচ হঠাৎ করেই তাকে বিশ্বকাপের মঞ্চে হাজির করা হলো। তানজিদ হাসান তামিম হয়তো নিয়মিত ভালো করতে পারেননি। তবে একজন তরুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার উপরে টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা রেখেছে এবং তাকে নিয়মিত সুযোগ দিয়েছে বিশ্বকাপে। সেজন্য অবশ্যই প্রশংসা করতে হয় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের। তবে সৌম্য সরকারকে একাদশে না নিয়ে অন্য কাউকে সুযোগ দিলে ভালো হতো। নাজমুল হোসেন শান্ত এবারের বিশ্বকাপে একেবারে‌ই নিষ্প্রভ ছিলেন। আমাদের ব্যাকআপ খেলোয়াড়ের সংখ্যা নেহাত‌ই কম বলে ম্যানেজমেন্ট হয়তো ভিন্ন কিছু ভাবতে পারেনি। বিশ্বকাপের আগে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়েছিল, সে জন্য অবশ্যই ক্রিকেট ধন্যবাদ পেতে পারে। বেশ কিছু স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করে বিপিএলের বাইরে অবশ্যই একটা ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করা দরকার, যেখানে বিদেশি কোন খেলোয়াড় দলভুক্ত হবে না।
বিপিএলে দেখা যায় বিদেশি খেলোয়াড়রাই একটি দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশি ক্রিকেটাররা সেই সুযোগ খুব বেশি পান না। স্পোর্টিং উইকেটে একটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে হয়তো ব্যাটসম্যানেরা অনেক বেশি সময় ব্যাটিং করার সুযোগ পাবেন এবং সেক্ষেত্রে হয়তো আমরা আগামীতে ২/৪ জন জেনুইন টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান পেয়ে যাবো। আফগানিস্তানের ৮/৯ জন ক্রিকেটার নিয়মিত আইপিএলে খেলার কারণে তাদের ম্যাচিউরিটি অনেক বেশি। এরই প্রতিফলন আমরা দেখছি এবারের বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে আফগানিস্তান জায়গা করে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। কোন বিশ্ব আসরের সেমিফাইনাল এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের দূরতম স্বপ্ন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফগানিস্তান এতো সাফল্য পাচ্ছে, অথচ এখনো তারা ঘরের মাঠে কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না। তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো এখনো পর্যন্ত মজবুত কিছু নয়। আর আমাদের এতো শত সুযোগ রয়েছে অথচ আমরা সেগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না।

লেখক: জাতীয় ক্রীড়া ভাষ্যকার, বেতার ও টেলিভিশন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA